চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ঐতিহ্য সমূহ এবং ৮ টি দর্শনীয় স্থানের নাম
আজকে আমার লেখা এ আর্টিকেলটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ঐতিহ্য সমূহ সম্পর্কে।এই জেলায় প্রাচীন ঐতিহ্যের স্মৃতি দেখা যায়।আমরা আজকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ঐতিহ্য সমূহ ও ৮টি দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে জানব।আপনারা যদি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ঐতিহ্য সমূহ সম্পর্কে এবং দর্শনের স্থানগুলো সম্পর্কে জানতে চান তাহলে শেষ পর্যন্ত আর্টিকেলটি পড়তে থাকুন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ঐতিহ্য সমূহ
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা একটি ঐতিহাসিক নির্দেশন এবং ঐতিহাসিক প্রতণ সমৃদ্ধ একটি জেলা।এই জেলার কিছু কিছু জায়গা বিশেষ কিছু কারণের জন্য বিখ্যাত যেমন:শিবগঞ্জ জেলাটিতে ব্রিটিশ আমলের স্থায়ীও কিছু গম্বুজ মসজিদ জমিদারদের বিভিন্ন স্থাপনা দেখা যায়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ঐতিহ্য ও অন্যতম দার্শনিক স্থান হিসেবে ছোট সোনা মসজিদ বিখ্যাত।
ছোট সোনামসজিদের মধ্যে রয়েছে ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের মাজার রয়েছে,দারস বাড়ি মসজিদ,ধানচকের মসজিদ,শাহ সুজার কাছারি বাড়ি,এছাড়াও রয়েছে তোহাখানা মসজিদ,কনসার্টরাজবাড়ী,চাঁপাইজামে মসজিদ,মহারাজপুর মঞ্চ,চামচিকা মসজিদ,ভোলাহাট কাজী জালালের বাগান,কলিহার জমিদার বাড়ি,মল্লিকপুর জমিদার বাড়ি,ভোলাহাট রেশম কুটির ও চিমনি,কাজিগ্রাম সাহার ব্রুজ, তিন গম্বুজ মসজিদ,শাহ নেয়ামত উল্লাহ মাজহার ইত্যাদি ।
এছাড়াও রয়েছে আরও অনেক দর্শনীয় এবং লোভনীয় স্থান।নিচে আমরা আরো জানবো চাপাইনবাবগঞ্জ জেলার ১০ টি দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে আপনারা যদি এই জেলা সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে চান তাহলে আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত করতে থাকুন।
ছোট সোনা মসজিদ
চাঁপাইনবাবগঞ্জের সুলতানি স্থাপত্যের রত্ন হিসেবে পরিচিত এই মসজিদ।সম্পূর্ণ খোদায়ের কাজ রয়েছে কিন্তু খুব নিকটে না গেলে সেই খোদায় চোখে পড়ে না।এর মধ্যে তারে উপরাষ্ট্র লিপিটির অর্থ হচ্ছে দয়াময় ও করুণাময় আল্লাহর নামে।মসজিদের চারপাশে খোদাইকৃত নকশা তৈরি করা রয়েছে।এই মসজিদে প্রবেশ পথ শুধুমাত্র চারটি।ছোট সোনামসজিদ ইট ও পাথরের দিয়ে নির্মিত।
এই মসজিদের ইমারত আয়তাকার ২৫.১ মিটার উত্তর দক্ষিণ এবং ১৫.৯ মিটার পূর্ব-পশ্চিম।১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে ধ্বংসশীলতার কারণে ছোট সোনামসজিদের কিছুটা ক্ষতি হয়।যার ফলে মসজিদের চার পাশে চারটি বহুভুজ আকৃতির কণা নির্মাণ করা হয়েছে । চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ঐতিহ্য সমূহ ও দর্শনীয় স্থান হিসেবে এটি খুবই পরিচিত।
দারুস বাড়ি মসজিদ ও মাদ্রাসা
ছোট সোনামসজিদ থেকে অল্প কিছু দূরত্ব অতিক্রম এর পরেই দারুসবারী মাদ্রাসা অবস্থিত।পুরুষানুক্রমে জনসাধারণ এই স্থানটিকে দারুস বারি বলে থাকে।আমরা সকলেই জানি দারুস অর্থ পাঠ।বহু বছর আগে এখানে একটি ছোট্ট মাদ্রাসা ছিল।দারুন বাড়ি মসজিদ ইট দ্বারা নির্মিত এবং এর অভ্যান্ত আয়তক্ষেত্রে দুই পাশে বিভক্ত।দ্বারসবারি মসজিদের আয়তন 99 ফুট 5 ইঞ্চি এবং চার ফুট নয় ইঞ্চি।
বর্তমানে এটি একটি নিরব এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশ এর মধ্যে মহিলাদের নামাজের জন্য ব্যবস্থা ছিল।বর্তমানে এই জায়গাটির দেওয়াল কয়েকটি বাদে আর কোন কিছু অবশিষ্ট নেই।এছাড়াও আশেপাশের লোকজন এই বাড়িটির নাম দিয়েছে চল্লিশা ঘর যেহেতু এই বাড়িটিতে চল্লিশটি রুম ছিল।এটিও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ঐতিহ্য সমূহের মধ্যে একটি।
খঞ্জনদিঘির মসজিদ
দারুস বাড়ি মসজিদ থেকে কিছু দূরত্ব অতিক্রম করলে আমরা আরেকটি মসজিদ দেখতে পাবো সেই মসজিদটির নাম হচ্ছে খঞ্জন দিঘী মসজিদ। এই মসজিদটি বালিয়া দীঘির দক্ষিণ পাড়ে অবস্থিত।সাধারণত মসজিদটি অনেকটা জঙ্গলের ভেতর অবস্থান করছিল। আস্তে আস্তে জঙ্গল কমে যাওয়ার কারণে এই মসজিদটি সবার নজরে আসে।বর্তমানে এই মসজিদটি দর্শনের জন্য অনেকেই এখানে এসে থাকে।
মসজিদটি নজরে আসার প্রথম থেকেই এর ধ্বংসবিশেষ লক্ষ করা যায়।এই মসজিদটিকে টিকিয়ে রাখার জন্য সকলে প্রচেষ্টা করছে।মসজিদটি অবস্থান করছে খুব নির্জন এলাকায়।ইট দিয়ে তৈরি এই সুন্দর মসজিদটির পুরো কারু কাজ দ্বারা আবদ্ধ।কিন্তু বর্তমানে এর সামান্য নমুনা রয়ে গেছে।মসজিদের আয়তন ৬২ বাই ৪১ ফুট। মসজিদটি দৃশ্য দেখার পর পন্ডিতেরা অনুমান করেছেন যে,এই মসজিদটি প্রায় ১৫ শতকের নির্মাণ করা হয়েছে।
ধানাইচকের মসজিদ
চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রায় প্রতিটি দর্শনীয় স্থানে একে অপর থেকে খুব কাছাকাছি অবস্থান করছে।ঠিক তেমনি ধানাই চকের মসজিদও খঞ্জন দিঘী মসজিদের ধ্বংস বিশেষ হতে কিছু দূরে অবস্থান করছে।এই মসজিদটিও প্রাচীন মসজিদ।এই মসজিদের কিছু কিছু স্তম্ভর পাথরের তৈরি।
বহু কাল আগে জানা গেছিল মসজিদটিতে তিনটি গম্বুজ ছিল কিন্তু বর্তমানে কিছু সাম্প্রতিক কালের গবেষণায় দেখা গেছে এখানে ছয়টি গম্বুজ রয়েছে।মসজিদের দেয়ালে রয়েছে অতি সুন্দর লতাপাতা ফুলের কাজ।এই মসজিদটিও আনুমানিক প্রায় ১৫ শতকের দিকে নির্মিত হয়েছে ।
চামচিকা মসজিদ
এই মসজিদটির নাম চামচিকা কেন দেওয়া হয়েছিল এখন পর্যন্ত তার কোন ব্যাখ্যা পাওয়া যায় নাই।কিন্তু জানা গেছে ভারতে অবস্থিত বড় চামচিকা মসজিদ আদলেই এটি তৈরি।দারসবাড়ি,ধানায় চকের মসজিদ মত এই মসজিদটিও পোড়ামাটির ইট ও কারু কাজ দ্বারা আবৃত এবং নির্মিত একটি মসজিদ।
চামচিকা মসজিদের দেয়ালের পরিধি মোটা হওয়ার কারণে প্রচন্ড গরমেও মসজিদের ভেতরে শীতলতা পরিবেশ বিদ্যমান থাকে।এই মসজিদের গম্বুজটি অতি সুন্দর ছিল।মুসলিমদের ওযু করার জন্য মসজিদের পূর্বে একটি ৬০ বিঘা আয়তনের বড় দিঘী রয়েছে যার পাড়ে সম্পূর্ণ সিঁড়ি বাঁধানো।
তিন গম্বুজ মসজিদ
শাহ নেয়ামত উল্লাহ (রহ:) দাঁড়া প্রতিষ্ঠিত এই তিন গম্বুজ মসজিদটি মোগল যুগের একটি বৈশিষ্ট্য। এটি শিবগঞ্জ জেলার ফিরোজপুর এ অবস্থিত।এই মসজিদে প্রবেশপথের সংখ্যা তিনটি এবং মেহরাব রয়েছে তিনটি অন্যান্য মসজিদ গুলোর মধ্যে তিন গম্বুজ মসজিদের ভেতরে বা বাইরে তেমন কোনভাবে কারো কাজ করা নেই মসজিদটিতে কয়েকটি তাক আছে এবং স্থানীয় বিভিন্ন জনগণ এই মসজিদে এসে প্রতিদিন নামাজ কায়েম করে।
বালিয়া দিঘী
রাজা বল্লাল সেন দ্বারা খননকৃত এই দিঘীটির নাম বালিয়া দিঘী।এই দিঘিটির পূর্বের নাম বল্লাল দিঘী,কিন্তু বর্তমানে এটি বালিয়াদিঘী বালিয়া দিঘী নামে পরিচিত।পূর্বের মানুষরা মনে করত বালুকমায় জলাশয় বলে এর নাম বালিয়া দিঘি।
এই প্রাচীন দিঘিটি কোতোয়ালি গেট হতে দক্ষিণে অবস্থান করে।এই দিঘীটির আয়তন প্রায় ৩৯. ৪৮ একর। প্রাচীনকালে এই দিঘিটির পানি রাজবাড়ী এবং বিভিন্ন দুর্গে সরবরাহ করা হতো।এই দিঘির পানি অত্যন্ত স্বচ্ছ কারণ এর তলদেশ বালুকামায়।
কানসাট জমিদার বাড়ি
কনসার্ট শিবগঞ্জ উপজেলার একটি প্রাচীন গ্রাম।কানসাট রয়েছে এক জমিদার বাড়ি।জমিদারা পূর্বে বগুড়া জেলায় ছিলেন পরবর্তীতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কনসার্টে এসে স্থায়ী হন। বংশের ক্রম অনুযায়ী এরা এখানে বসবাস করতে থাকেন।শোনা গেছিল প্রজা সাধারনের জন্য এরা কিছু রেখে যায়নি।এরা মুসলিম জমিদার হলেও সুখ্যাতির বদলে কুখ্যাত লাভ করেছেন।
প্রাচীনকালে এখানে কংস হাট্য নামক রাজ ছিল বলে জানা যায়।কানসাট নামটি এই কংস হাট্য রাজার নাম অনুসারে হয়েছে।কানসাট জমিদার বাড়ি জমিদাররা আর হাকিয়ার বেচাকেনার ব্যবসা করতেন।১৯৪০ সালে বারোটি ইউনিয়নের মুসলিম সম্প্রদায়রা একত্রিত হয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা করেন।এই মামলায় জমিদার হেরে যাওয়ায় স্থায়ী ও মুসলিমদের ডেকে ক্ষমাপ্রার্থনা করেন।
লেখকের মন্তব্য
আজকে আমরা এই আর্টিকেলটি থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ঐতিহ্য সমূহ সম্পর্কে জানতে পারলাম।এই জেলাটিতে অপূর্ব সুন্দর কিছু দর্শনীয় স্থান এবং ঐতিহ্য সমূহ রয়েছে।আর্টিকেলটিতে এই জেলাটি বিভিন্ন অজানা ঐতিহ্য সম্পর্কে এবং ৮ টি দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে জানতে পারলাম।
আপনার যদি আমার এই আর্টিকেলটি পড়ে ভালো লেগে থাকে তাহলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন এবং এই ধরনের আরও আর্টিকেল করতে নিয়মিত আমার ওয়েবসাইটটি ভিজিট করবে।”ধন্যবাদ”।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url