গর্ভাবস্থায় নারীদের সতর্কতা সম্পর্কে বিস্তারিত

প্রিয় পাঠক বিন্দু আসসালামু আলাইকুম। আপনারা অনেকেই হয়তো গর্ভাবস্থায় নারীদের সতর্কতা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানেন না।গর্ভাবস্থায় নারীদের সতর্কতা অবলম্বন করা অবশ্যক। এই নারীদের খুব সতর্কভাবে চলাফেরা করতে হয়। অতি অল্পতেই এই সময় অনেক ক্ষতিও হতে পারে।
আপনারা যারা গর্ভাবস্থায় নারীদের সতর্কতা সম্পর্কে জানেন না আজকে আমার এই লেখা আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক, গর্ভ অবস্থায় নারীদের কি কি সতর্কতা পালন করতে হয়।

ভূমিকা

গর্ভাবস্থায় নারীদের সর্তকতা সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। এই অবস্থায় একজন গর্ভবতী নারীকে কিছু বিশেষ নিয়মে মধ্যে থাকতে হয় ।তাদের খাবার থেকে শুরু করে প্রায় সকল বিষয়ে সচেতন এবং সতর্ক হতে হয়। গর্ভ অবস্থায় তাদের নানা সমস্যা হয়ে থাকে। এই সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য তাদের কিছু নিয়ম পালন করতে হয় এবং সব সময় নিজেদের প্রতি যত্নশীল হতে হয়।

গর্ভাবস্থায় বেশি শুয়ে থাকলে কি হয়

গর্ভাবস্থায় নারীদের সতর্কতা এর প্রথম হচ্ছে বেশি শুয়ে না থাকা।একজন গর্ভবতী নারী যদি বেশি শুয়ে থাকে তাহলে প্রসবের সময় সন্তান মৃত জন্ম নেওয়ার সম্ভাবনা বেশি।গবেষণা করে দেখেছেন যে গর্ভাবস্থায় নারীরা বেশি শুয়ে থাকলে শিশুদের হৃদপিণ্ড এবং নড়াচড়া কমে যায়।প্রতিটি গর্ভবতী নারীর জানা উচিত তাদের একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ঘুমাতে হবে।

দিনে ৯ ঘণ্টার বেশি ঘুমালে গর্ভস্থ সন্তানের ঝুঁকি হতে পারে।গর্ভাবস্থায় নারীদের ক্লান্তি বেড়ে যেতে পারে, এই কারণে ঘুম বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ।বিশেষ করে রাত্রে ঘুমানোর সময় গর্ভবতী নারীদের পাকস্থলীর ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে যার ফলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। একজন গর্ভবতী নারীর মোট নিয়ন্ত্রিত ঘুম প্রয়োজন হয় রাত্রে ঘুমানোর জন্য শারীরিক পরিশ্রমের প্রয়োজন হয় ।

শরীর এ্যাকটিভ থাকলে রক্ত সঞ্চালন ভালো হয় এবং ঘুমও ভালো হয় । রাতে ভালো ঘুম হলে অতিরিক্ত ঘুমের কোন প্রয়োজন হয় না। তাই প্রতিটি গর্ভবর্তী নারীর উচিত রাত্রে নিয়ম করে ঘুমানো। গর্ভাবস্থায় নারীদের সতর্কতা এর মধ্যে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

গর্ভাবস্থায় কি কি কাজ করা নিষেধ

গর্ভ অবস্থায় নারীদের কিছু কিছু কাজ থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে হয়। বসতবাড়িতে অনেক ধরনের কাজ রয়েছে যার ফলে একজন গর্ভবতী নারী এবং তার শিশুর ক্ষতিও হতে পারে তাই আমাদের গর্ভাবস্থায় নারীদের সতর্কতা এর দ্বিতীয় হচ্ছে গর্ভকালীন অবস্থায় নারীদের নিষিদ্ধ কাজ।
  • গর্ভাবস্থায় থাকাকালীন নারীদের বেশি ভারী কাজ করা যাবে না যেমন টিউবওয়েল চাপা, ভারী কাপড়-চোপড় ধোঁয়া, ভারী জিনিস, তোলা ধান ভাঙ্গা ইত্যাদি ।
  • গর্ভাবস্থায় নারীদের শরীরে ঝুঁকি লাগে এমন কোন কাজ এবং দূরের যাতায়াত করা যাবে না।
  • কাজের মধ্যেও দিনের বেলা অন্তত দুই ঘন্টা বিশ্রাম নিতে হবে।

গর্ভাবস্থায় না খেয়ে থাকলে কি হয়

গর্ভাবস্থায় না খেয়ে থাকলে শরীরে পুষ্টির অভাব দেখা দিতে পারে ।এতে করে মা এবং গর্ভস্থ শিশুর দুইজনেরই পুষ্টির ঘাটতি দেখা দেয় শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। এছাড়াও আইরন হিমোগ্লোবিন ইত্যাদির ঘাটতি হতে পারে।গর্ভাবস্থায় প্রোটিন যুক্ত খাবার বেশি বেশি খাওয়া উচিত যা শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশের সহায়তা করে যেমন ডিম মাছ মাংস ডাল ইত্যাদি।

গর্ভাবস্থায় একজন নারীর দুই থেকে তিন ঘন্টার বেশি খাবার ছাড়া থাকা যাবে না ।গর্ভাবস্থায় শিশুর খাদ্যের চাহিদা মেটানোর জন্য একজন নারীর খাবার খাওয়া খুবই জরুরী ।এছাড়াও গর্ভবতী নারী যদি না খেয়ে থাকে তাহলে এটি তার সন্তানের স্নায়বীক বিকাশের ওপর প্রচুর প্রভাব ফেলে। তাই প্রতিটি গর্ভবতী নারীর সতর্কতার সাথে সকল কিছু পালন করা উচিত।

গর্ভাবস্থায় পানি কম খেলে কি হয়

পানি কম খাওয়ার ফলে সুস্থ স্বাভাবিক মানুষেরও বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। আর গর্ভাবস্থায় পানি কম খেলে সেটি মা এবং শিশুর ওপর প্রভাব ফেলতে পারে । একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের দিনে ছয় ক্লাস পানি পান করা প্রয়োজন। সেই তুলনায় একজন গর্ভবতী নারীর আট থেকে দশ ক্লাস পানি বা প্রায় ৫০০ মিলিলিটার পানি পান করা প্রয়োজন।
পানি কম গ্রহণ করার ফলে গর্ভের পানির ঘাটতি দেখা দিলে শিশুর ইনফেকশনে ঝুঁকি থাকে। এছাড়াও আর বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে যেমন:গর্ভপাত ও ভ্রূণের মৃত্যুর আশঙ্কা,বাচ্চার ওজন কমে যাওয়া,অপরিনত বাচ্চা প্রসব হয় ইত্যাদি।এই অবস্থায় নারীর শরীর জল গ্রহনের চেয়ে হারায় বেশি। এর ফলে পানি শুন্যতা ও দেখা যায়।

গর্ভাবস্থায় নারীদের খাবার তালিকা

গর্ভাবস্থায় নারীদের একটি নির্দিষ্ট খাবার তালিকা থাকা দরকার।সে তালিকার মধ্যে সুষম খাদ্য,স্বাস্থকর এবং পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার অবশ্যক।এই খাবার তালিকাটি পুষ্টির চাহিদা নিশ্চিত করে এবং শিশুর সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।শিশুর গঠন এবং বিকাশের জন্য খাবার অবশ্যক।

নিচে গর্ভবতী নারীর ১৮০০ ক্যালারির খাবার তালিকা দেওয়া হলো,যার উচ্চতা ৫ ফুট ২ ইঞ্চি, ওজন ৫৫ কেজি এবং প্রতিদিন নিয়মিত ব্যয়াম করে।

  • ভাত (লাল চাল হলে ভালো) : ২.৫-৩ কাপ (৫০০-৬০০ গ্রাম )
  • সবুজ ও রঙিন শাক : ১-১.৫ বাটি (২৫০-৩৭৫গ্রাম )
  • কমলা ফল ও সবজি : ১ বাটি ( ২৫০গ্রাম )
  • ডিম,মাছ,মাংস : ১ পিস (৫০ গ্রাম)
  • দুধ : ১ গ্লাস (২৫০ গ্রাম)
  • ঘন ডাল : ২ বাটি ( ৫০০ গ্রাম )

গর্ভাবস্থায় অন্যান্য সতর্কতা

  • একজন নারী স্বাভাবিক অবস্থায় যে সকল ঔষধ গ্রহন করে গর্ভাবস্থায় এ সকল ঔষধ খাওয়া গর্ভস্থ শিশুর জন্য ঝুকি স্বরুপ।অনেক মানুষ পরামর্শ ছাড়াই বিভিন্ন পেপটিক ঔষধ কিনে খায়।এই সকল ঔষধ হতে পারে গর্ভস্থ সন্তানের জন্য ক্ষতির কারন।তাই এই সময়ে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ঔষধ গ্রহন করা থেকে বিরত থাকুন।এছাড়াও গর্ভাবস্থার প্রথম দিন থেকেই ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত।
  • যদি দীর্ঘ কাল আপনি কোন ঔষধ নিয়মিতভাবে গ্রহন করে আসছেন,তাহলে সে বিষয়ে আপনার চিকিৎসককে জানানো দরকার।অতিরিক্ত মানসিক চাপ, ধুমপান, অ্যালকাহল সেবন থেকে দুরে থাকতে হবে।পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করতে হবে।পূর্বের কোনো ড্যামেজ/এবরশন হয়ে থাকলে চিকিৎসকে জানাতে হবে।
  • প্রথম ২৮ সপ্তাহ পর্যন্ত অর্থাৎ প্রায় গর্ভকালীন ৬মাসের প্রাতি মাসে ১বার, ৩৬ সপ্তাহ অর্থাৎ ৮ মাসে প্রতি ২ সপ্তাহ পরপর চিকিৎসকের কাছে যাওয়া জরুরী।এছাড়াও যাদের ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন বা অন্য কোন শারীরিক জটিলতা আছে তদের ডাক্তার antenatal visit এর সংখ্য বেশি হতে পারে।প্রতিটি নারীর শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে ডাক্তার ভিজিটের সংখ্যা।
  • আবার গর্ভাবস্থায় কোনো জরুরি কারনে যদি X-Ray করতে বলা হয় তাহলে ডক্তারকে গর্ভবতী হওয়ার কথা জানাতে হবে। X-Ray শিশুর birth defect এর কারন হতে পারে।এছাড়াও শিশুর নড়াচড়া বন্ধ হয়ে গেলে বা কমে গেলে অপেক্ষা করার ঝুকি নেবেন না।দ্রুত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করবেন।

লেখকের মন্তব্য

প্রিয় পাঠক বিন্দু আজকের আমার লেখা আর্টিকেলটির মাধ্যমে আপনারা জানতে পারলেন গর্ভাবস্থায় নারীদের সতর্কতা সম্পর্কে।এছাড়াও জানতে পারলাম গর্ভাবস্থয় একজন নারীকে কিভাবে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।এই সময়  নারীদের একটু বেশী যত্নের মধ্যে ও সতর্ক থাকতে হয়। প্রতিটি বিষয়ে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা লাগে।

এই অবস্থায় প্রতিটি নারীর চলাফেরা, আচরণ হতে হবে মার্জিত।শিশুর সুস্থ ও স্বাভাবিক প্রসবের জন্য প্রতিটি নারীকে কষ্ট করতে হয়।আমার লেখা আর্টিকেলটি যদি আপনাদের কাছে ভালো লেগে থাকে তাহলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। এই ধরনের বিভিন্ন পোস্ট পেতে আমার ওয়েবসাইটটি ফলো করুন এবং নিয়মিত ভিজিট করুন।” ধন্যবাদ”।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url