বাংলাদেশের শীর্ষ ঐতিহ্যবাহী স্থানের ৫ টি নাম বিস্তারিত
আসসালামুআলাইকুম।প্রিয় পাঠক বিন্দু আজকের আমার লেখার এই আর্টিকেলটি বাংলাদেশের
শীর্ষ ঐতিহ্যবাহী স্থান সম্পর্কে।আপনারা অনেকেই হয়তো বাংলাদেশের শীর্ষ ঐতিহ্যবাহী
স্থান সম্পর্কে অজ্ঞাত।আবার অনেকেই হয়তো জানেন এই সম্পর্কে।
তাই আপনারা যারা বাংলাদেশের শীর্ষ ঐতিহ্যবাহী স্থান আজকের আর্টিকেল মাধ্যমে আমরা
ঐতিহ্যবাহী স্থান সম্পর্কে জানব।তাহলে চলুন জেনে নেই ১৫টি ঐতিহ্যবাহী স্থান
সম্পর্কে।
সন্দুরবন
বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বড় নোনা পরিবেশের ম্যানগ্রোভ বন হচ্ছে আমাদের সুন্দরবন। এটি বিশ্বের সর্ববৃহৎ অখন্ড বনভূমি। বিশ্বের প্রাকৃতিক বিস্ময়বলির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে,বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত প্রশস্ত বনভূমির এই সুন্দরবন। সুন্দরবন বাংলাদেশের পদ্মা, মেঘনা, ব্রক্ষপুত্র নদীত্রয় এর অববাহিক বদ্বীপ এলাকায় অবস্থিত।
আরও পড়ুন: নাটোর জেলার বিখ্যাত স্থান এবং ইতিহাস
অপরূপ সুন্দর এই বনভূমি খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট জেলার কিছু অংশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা ও দক্ষিন চব্বিশ পরগনা জুড়ে বিস্তারিত। সুন্দরবন মোট ১০০০০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তারিত। এর মধ্যে প্রায় ৬৫১৭ বর্গ কিলোমিটার (৬৬%) বাংলাদেশে অবস্থিত এবং বাকি ৩৪% ভারতে অবস্থিত।
১৯৯৭ সালের ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের শীর্ষ ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি
দেয়।সামুদ্রিক স্রোতধারা, কাদা চর এবং এই বনের লবণাক্ততা সহ ক্ষুদ্রয়তন দ্বীপ
মালা সুন্দরবনকে আঁকড়ে রয়েছে। সুন্দরবনের ৩১.১ শতাংশ জুড়ে রয়েছে
নদীনালা,খালবিল। এই বনে রয়েছে বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার। এছাড়াও রয়েছে নানা
পাখি, চিত্র হরিণ, কুমির, সাপসহ অসংখ্য প্রাণী।
সুন্দরবনে আরোও রয়েছে নানা ধরনের গাছ যেমন সুন্দরী ও গেওয়া। সুন্দরী গাছের নাম অনুসারে এই বনের নাম সুন্দর বন দেওয়া হয়েছে। সুন্দরবনে আরোও রয়েছে ২৯০টি পাখি,১২০ টি মাছ,৪২ টি স্তন্যপায়ী,৩৫ টি সরীসৃপ সহ আরও নানা প্রাণী।
পাহাড়পুর
পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার নাম ছাড়াও এটি আরও দুইটি নামে বিখ্যাত যেমন সোমপুর বিহার
বা সোমপুর মহাবিহার। বর্তমানে এটি একটি ধ্বংস প্রাপ্ত প্রাচীন বৌদ্ধবিহার। এই
বিহারটি নির্মাণ করে পাল বংশের দ্বীতিয় রাজা শ্রী পাল। প্রায় অষ্টম শতকের শেষের
দিকে বা নবম শতকে এই বিহার তৈরি করা হয়।
এই বিহারের বিশাল স্থাপনা আবিষ্কার করেন ১৮৭৯ সালে স্যার আলেকজান্ডার।ইউনেস্কোর
স্বীকৃতি অনুসারে এটি দক্ষিণ হিমালয়ের ২য় বৃহত্তম বৌদ্ধবিহার। ভারতের নালন্দা
মহাবিহার এর আয়তন এর সাথে তুলনা করা হয়েছে। প্রায় ৩০০ বছর বৌদ্ধদের ধর্মে
বিখ্যাত শিক্ষাদান কেন্দ্র ছিল।
১৯৮৫ সালে ইউনেস্কো পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার কে বাংলাদেশের শীর্ষ ঐতিহ্যবাহী স্থান
হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। এটি নওগাঁ জেলার বদল গাছি উপজেলার পাহাড়পুর গ্রাম এ
অবস্থিত। গ্রামের ০.১০ বর্গ কিলোমিটার (১০ হেক্টর) জুড়ে এটি অবস্থিত। এটি
পার্শ্ববর্তী সমতল ভূমি থেকে প্রায় ৩০.৩০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত।
লালবাঘ কেল্লা
মোঘল আমলে একমাত্র ঐতিহাসিক নিদর্শন হচ্ছে লালবাগ কেল্লা। এটি কষ্টি পাথর,
মার্বেল পাথর আর রঙ বেরঙের টালি দিয়ে নির্মিত। এখন পর্যন্ত লালবাগ কেল্লা ছাড়া
অন্য কোনও ঐতিহাসিক নিদর্শন এ এমন কোনো সং মিশ্রণ পাওয়া যায় নি। লালবাগ কেল্লার
নাম করন করা হয়েছিল ওই এলাকার উপর ভিত্তি করে। আগে এই কেল্লার নাম ছিলো "কেল্লা
আওরঙ্গবাদ"। যা বর্তমানে লালবাগ কেল্লা নামে পরিচিত।
১৬৭৮ সালে এই কেল্লার নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল। এই কেল্লার নির্মাণ কাজ শুরু
করেন মোঘল সম্রাট আজম শাহ্। খুব অল্প সময়ে আজম শাহ্ এই অসাধারণ কাজ টি করেছিলেন।
আজম শাহ্ ছিলেন তাজমহল তৈরির জন্য বিখ্যাত শাহ্ জাহানের নাতি। আজম শাহ্ চলে
যাওয়ায় লালবাগ কেল্লার কাজ বন্ধ ছিল।
পরবর্তীতে এর অবসান ঘটায় নবাব শায়েস্তা খাঁ যা আবার এক বছর পরে থেমে যায় । পরে
আবার কাজ শুরু হয় দুর্গ নির্মাণের যা চার বছর পরে আবার বন্ধ হয়ে যায় ।লালবাগ
কেল্লায় রয়েছে তিনটি বিশাল দরজা। জনসাধারণকে উন্মুক্ত করে দেয়া এই দরজা দিয়ে
ঢুকলেই সোজা চোখে পরে শায়েস্তা খানের মেয়ে পরী বিবির সমাধি। এছাড়াও কেল্লার
চত্বরে রয়েছে তিনটি স্থাপনা
- কেন্দ্রস্থলের দরবার হল ও হাম্মাম খানা
- পরী বিবির সমাধি
- উত্তর পশ্চিমাংশ শাহী মসজিদ
লালবাগ কেল্লা গ্রীষ্মকালে সকাল ১০ থাকে ৬ পর্যন্ত খোলা থাকে। দুপুরে আধা ঘণ্টা
বন্ধ এবং শীতকালে সকাল ৯ থাকে ৫ পর্যন্ত খোলা থাকে। জুম্মার নামাজের জন্য বারোটা
থাকে তিনটা পর্যন্ত বন্ধ। রবিবার সহ সকল সকল সরকারি ছুটিতে এই কেল্লা বন্ধ থাকে।
রাঙ্গামাটি
রাঙ্গামাটি একটি পার্বত্য জেলা অঞ্চল এটি চট্টগ্রাম বিভাগের দক্ষিণ- পূর্বাঞ্চল এ
অবস্থিত প্রশাসনিক অঞ্চল। । এই উপজেলার সংখ্যা অনুসারে রাঙ্গামাটি বাংলাদেশে এ
শ্রেণী ভুক্ত জেলা। আয়তনের দিক দিয়ে এটি বাংলাদেশের বৃহত্তম জেলা। রাঙ্গা মাটির
আয়তন প্রায় ৬১১৬.১৩ বর্গ কিলোমিটার। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে রাঙ্গা মাটির
দুরত্ব প্রায় ৩০৮ কিলোমিটার।
রাঙ্গা মাটি জেলার উত্তরে রয়েছে দক্ষিণ বান্দরবান, পূর্বে ভারতের মিজোরাম,
মিয়ানমারে চিন রাজ্য, পশ্চিম চট্রগ্রাম জেলা ও খাগড়াছড়ি জেলা। ভারত ও
মিয়ানমারের আন্তর্জাতিক সীমানা রয়েছে এই জেলায়।২০২২ সালের জনসংখ্যা পরিসংখ্যান
অনুযায়ী রাঙ্গা মাটি জেলার মোট জনসংখ্যা ৬৪৭৫৮৭ জন। ধর্ম অনুযায়ী মোট জনসংখ্যার
৩৬.২২% মুসলিম,৫.১০% হিন্দু,৫৭.২৫% বোদ্ধ এবং ১.৩২% খ্রিষ্টান ও অন্যান্য
ধর্মাবলম্বি।
ময়নামতি
বাংলাদেশের কুমিল্লা জেলায় অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক স্থানের নাম হচ্ছে ময়নামতি।
রোহিতগিরি এর বর্তমান নাম ময়নামতি। ময়নামতি প্রত্নস্থল হচ্ছে লালামাই অঞ্চলের
প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন। ময়নামতির ধ্বংস বিশেষ হচ্ছে একটি প্রাচীন নগরী ও
বোদ্ধবিহার। জয়কর্মান্তবসাক নামক একটি প্রাচীন নগরীর ধ্বংস বিশেষ হচ্ছে
ময়নামতি।
শালবন বিহার অন্যতম প্রধান নির্দশন খননকৃত কুমিল্লা ময়নামতিতে। এই বিহারটি
লালমাই পাহাড়ের মাঝামাঝি এলাকায় অবস্থিত। আই স্থানটি দর্শনের জন্য অসংখ্য লোক
পর্যটকের সমাগম ঘটে। থাকে থাকে ময়নামতির দুরত্ব প্রায় ১১৪ কিলোমিটার।
চট্রগ্রাম থেকে ময়নামতি যেতে সময় লাগে মাত্র আধা ঘণ্টা। ময়নামতি
প্রত্নস্থলেরে কিছু স্থাপনার নাম
- কুটিলা মুড়া
- ইটাখোলা মুড়া
- রূপবান মুড়া
- চারপত্র মুড়া
- শালবন বৌদ্ধ বিহার
- রানী ময়নামতির প্রাসাদ ও মন্দির
লেখকের মন্তব্য
আজকে আমার লেখা আর্টিকালটি ছিল বাংলাদেশের শীর্ষ ঐতিহ্যবাহী স্থান সম্পর্কে।
বাংলাদেশে অসংখ্য সুন্দর জায়গা এবং ঐতিহ্যবাহী স্থান রয়েছে। আমার তার মধ্যে
৫ টি স্থান সম্পর্কে জানলাম। এই স্থানগুলো সম্পর্কে অনেকেই হয়তো অজানা
ছিলেন। আজ এই আর্টিকালটির মাধ্যমে ঐতিহ্যবাহী স্থান গুলোর অজানা তথ্য জানতে
পারলেন ।
আজকের আমার লেখা আর্টিকেল যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে বন্ধুদের সাথে
শেয়ার করবেন এবং প্রতিদিন এই ধরনের আরো আর্টিকেল পড়তে চাইলে নিয়মিত আমার
ওয়েবসাইটটি ভিজিট করবেন। "ধন্যবাদ"।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url