নাটোর জেলার বিখ্যাত স্থান এবং ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তারিত
প্রিয় পাঠক বিন্দু আসসালামু আলাইকুম। আজকে আমার লেখা আর্টিকেলটি নাটোর জেলার
বিখ্যাত স্থান এবং ইতিহাস সম্পর্কে। আপনারা অনেকেই হয়তো নাটোর জেলার বিখ্যাত
স্থান সম্পর্কে জানেন না আবার অনেকে হয়তো এই স্থান সম্পর্কে জানেন।
তাই আজকে আমার লেখা এ আর্টিকেলটি তাদের জন্য যারা নাটোর জেলার বিখ্যাত স্থান
সম্পর্কে জানেন না অথবা নাটোরের ইতিহাস সম্পর্কে অজ্ঞাত রয়েছেন । তাহলে চলুন
জেনে নিই নাটোর জেলার বিখ্যাত স্থান এবং ইতিহাস সম্পর্কে।
ইতিহাস
বাংলাদেশের আয়তনের দিক দিয়ে ৩৫ তম জেলা হচ্ছে নাটোর।১৭৭৩ থেকে ১৮২৫ সাল পর্যন্ত রাজশাহী জেলার সদর দপ্তর নাটক। ১৮২৫ সালে সদর দপ্তর রাজশাহীতে স্থানান্তর হয় এবং নাটোর রাজশাহী জেলার একটি মহকুমায় পরিণত হয় ১৮২৯ সালে। নাটোর পূর্বে পুণ্ড্রবর্ধন নামে পরিচিত ছিল।নাটোর সোনার অলংকার তৈরীর জন্য বিখ্যাত। পূর্বে শুধুমাত্র হিন্দু সম্প্রদায়ের মাধ্যমে সোনা তৈরি সীমাবদ্ধ ছিল, বর্তমানে অনেক মুসলমানও এই পেশায় বসবাস করছে।
এই জেলায় প্রায় জুয়েলারি দোকান রয়েছে ৫ শতাধিক। এছাড়াও নাটোরের রয়েছে নানা ধরনের বিখ্যাত খাবার যেমন নাটোর কাঁচাগোল্লা একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার। বাঙালিরা ভোজনের পর সাধারণত মিষ্টি খেতে পছন্দ করেন। সেই দিক থেকে নাটোরের কাঁচা গোল্লা একটি আন্তর্জাতিক পরিচিতি। এছাড়াও নাটোরের বনলতা সেন, রানী ভবন, উত্তরা গণভবন, চলন বিল, হালতিবিল ইত্যাদি অনেক বিখ্যাত।
উত্তরা গণভবন
উত্তরা গণভবন অর্থাৎ দীঘা পাতিয়া রাজবাড়ী ।উত্তরা গণভবন ১৮ শতকের নির্মিত
মহারাজাদের বাসস্থান। দিঘাপাতিয়া রাজবাড়ী বা উত্তরা গণভবন বাংলাদেশের নাটোর
জেলায় অবস্থিত। নাটোর শহর হতে এটি প্রায় তিন কিমি দূরে অবস্থান করছে।
বর্তমানে দিঘা পাতিয়া উত্তরা গণভবন বা উত্তরা অঞ্চলের গভার্মেন্ট হাউস নামে
বিখ্যাত।১৯৭২ সালের ৯ই ফেব্রুয়ারি দিঘাপাতিয়া রাজবাড়ীকে উত্তরা গণভবন নাম
দেওয়া হয়েছিল ।
উত্তরা গণভবন প্রায় ৪৩ একর জমির ওপর নির্মাণ করা হয়েছে। দীঘা পাতিয়া রাজবাড়ী
অর্থাৎ উত্তরা গণভবনে মোট বারটি ভবন রয়েছে এবং এগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রধান
প্রসাদ, ভ্রমন কুমার প্রাসাদ ভবন, প্রধান কাচারী ভবন, তিনটি কর্তা রানী বাড়ি,
প্রধান ফটোক রান্নাঘর,মোটর গেরাজ, ড্রাইভার কোয়াটার, কোষাগার ও সেন্টি বক্স।
এই ভবনের সকল জানালা দরজা মূল্যবান কাঠ দ্বারা নির্মিত।
এ রাজবাড়ীটি উঁচু প্রাচীর এবং পরিখা দ্বারা আবন্ধ। উত্তরা গণভবনের পূর্ব পাশে
চারতলা বিশিষ্ট পিরামিড আকৃতির প্রবেশ দ্বার রয়েছে। উত্তরা গণভবন মূলত
পূর্বমুখী একতলা ভবন ।এছাড়াও প্রাসাদ ব্লগটির নিকটে “কুমার প্যাসেল” নামক
সুন্দর দ্বিতল ভবনের অবস্থা। এর ওপর তলায় রয়েছে শায়ন কক্ষ, সাথে একটি
ড্রেসিংরুম এবং নিচ তলায় আরো রয়েছে সারিসারি কক্ষ।
নাটোর রাজবাড়ি
নাটোর রাজবাড়ি অবস্থান করছে নাটোর সদর উপজেলা।নাটোর রাজবাড়ী রাজশাহী শহর থেকে
প্রায় আটচল্লিশ কিলোমিটার পূর্বে নাটোর জেলা সদরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থানকৃত
বাসভবন। নাটোর রাজবংশের স্মৃতিচিহ্ন হচ্ছে নাটোর রাজবাড়ী। ১৯০৬ সাল থেকে ১৯১০
সালে মধ্যে নাটোর রাজবাড়ীর নির্মাণ হয়েছিল। নাটোর রাজবাড়ী প্রায় ১২০ একর
জমির ওপর নির্মিত।নাটোর রাজবাড়িতে ছোট বড় মোট আটটি ভবন রয়েছে।
আরও রয়েছে দুইটি গভীর পুকুর এবং পাঁচটি ছোট পুকুর। রাজবাড়ীটি জুড়ে রয়েছে
দুই স্তরের বেড়চৌকি।ছোট বড় দুই তরফে বিভক্ত পুরো এলাকা। এছাড়াও নাটোর
রাজবাড়ীতে আরো রয়েছে উল্লেখযোগ্য মন্দির সম্মূহ যেমন, শ্যামসুন্দর মন্দির,
আনন্দময়ী কালিবাড়ি মন্দির, তারকেশ্বর শিব মন্দির। ১৯৮৬ সাল থেকে প্রশাসন
রাজবাড়ীর পুরো এলাকাটি রানী ভবানী কেন্দ্রীয় উদ্যান বা যুব পার্ক হিসেবে
পরিচালিত হয়ে আসছে।
চলনবিল জাদুঘর
চলন বিল জাদুঘরের অবস্থান নাটোর জেলার সদর থেকে 50 কিমি পূর্বে। এই জাদুঘরটি
গুরুদাসপুর উপজেলা থেকে ৪ কিলোমিটার উত্তরের খবজিপুর ইউনিয়নে অবস্থান
করছে।চলন বিল জাদুঘর হচ্ছে চলন বিল অঞ্চলে কিছু সমাজকর্মীর শ্রম সাধনা ফলন।
চলনবিল জাদুঘর ১৯৮৯ সালে ২ জুলাই অধিদপ্তরের আয়ত্তে চলে আসে ।
চলন বীর জাদুঘরের নির্দেশনা গুলোর মধ্যে রয়েছে বাদশা আলমগীর এবং সম্রাট
নাসিরউদ্দিনের লেখা দুইটি কোরআন শরীফ সহ তুলট কাগজে হাতে লেখা তিন থেকে চারশ
বছরের পুরনো আটটি এবং সাতটি আংশিক কোরআন শরীফ, ২৯৭টি ধর্মগ্রন্থ এবং 15 টি
হাদিস শরীফ। এছাড়াও জাদুকরে আরও রয়েছে ৯০টি দেশের মুদ্রা, ডাক টিকিট,
বিভিন্ন শাসন আমলের টেরাকোটা, শিলা কষ্টি পাথর, সূর্যদেব মাতৃকা মূর্তি
ইত্যাদি।
চলন বিল জাদুঘর গ্রীষ্মকালে সকাল দশটা থেকে ছয়টা পর্যন্ত জাদুঘর খোলা থাকে
এবং শীতকালে সকাল নয়টা থেকে ৫ টা পর্যন্ত এই জাদুঘর খোলা থাকে। রবিবার
সাধারণ ছুটি, এছাড়াও যেকোনো সরকারি ছুটির দিবসে জাদুঘর বন্ধ থাকে।
গীনভ্যালী পার্ক
নাটোর গ্রীন ভ্যালী পার্ক নাটোর জেলার লালপুর উপজেলা সদর হতে দুই কিলোমিটার
দূরে অবস্থান করছে। চমৎকার একটি বিনোদন কেন্দ্র হচ্ছে এই গ্রীন ভ্যালী
পার্ক। এই পার্কটি 123 বিঘা জমির উপর নির্মিত। গ্রীন ভ্যালী পার্কে রয়েছে
সকল বয়সী মানুষ বা দর্শনার্থীদের জন্য আকর্ষণীয় সকল রাইড। যেমন মিনি ট্রেন,
বুলেট ট্রেন, ফানি সুইং, ট্রিটবোর্ড, নাগরদোলা, পাইরেট শীপ, প্যাটেল বোট
ইত্যাদি সকল রাইড।এখানে সর্বমোট ১৬টি রাইড রয়েছে।
প্রতিটি রাইড এর টিকিট ৩০ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়াও এই পার্কের প্রায়
৩০ একর জায়গা জুড়ে রয়েছে নয়নাভীরাম লেক যা প্রকৃতির সৌন্দর্য মনোরম
পরিবেশ। এছাড়াও নাটোর গ্রীন ভ্যালী পার্কে দর্শনার্থীদের জন্য রয়েছে শুটিং
স্পট, পিকনিক স্পট, কনসার্ট এন্ড প্লেগ্রাউন্ড, সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা ও
বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, নামাজের স্থান, কার পার্কিং, সোভা সেমিনারি স্থান, আবাসিক
ব্যবস্থা এবং এডভেঞ্চার রাইডস।
নাটোর গ্রিন ভ্যালি পার্ক প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত
উন্মুক্ত থাকে। এছাড়াও ঋতু পরিবর্তনের সাথে পার্কটি খোলা বা বন্ধের সময়
পরিবর্তন হতে পারে। গ্রিন ভ্যালি পার্কে প্রবেশের জন্য প্রত্যেক ব্যক্তি ৫০
টাকা প্রবেশ মূল্য।
চলন বিল
চলন বিল সিংড়া নাটোর জেলায় অবস্থিত। চলন বিল গুরুদাসপুর এবং সিংড়া এলাকার
মধ্যে বিস্তারিত।নাটোর জেলায় অবস্থিত চলনবিল হচ্ছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড়
বিল। প্রায় তিনটি জেলা জুড়ে এই বিলটি বিস্তারিত।চলন বিল রাজশাহী বিভাগের ৪ টি
জেলা ৮ টি উপজেলা ৭ টি ইউনিয়ন ১৪০০ গ্রাম এবং ১৪ টি নদী নিয়ে বিস্তার করছে।
এছাড়াও আরো রয়েছে ছোট-বড় অনেক জলাশয়। এই বিখ্যাত চলন বিল দেখা যায় নাটোর
সিরাজগঞ্জ পাবনা জেলার বিস্তৃতি অংশ জুড়ে যা বর্ষা এবং বর্ষার পরবর্তী সময়েও
দেখা যায়।
চলন বিলে সৃষ্টি হয় ব্রাহ্মণপুএ নদ প্রবাহ পথ পরিবর্তনের সময়। অর্থাৎ যখন
ব্রাহ্মপুত্র নদ যমুনায় রূপ পরিবর্তন করে তখন চলনবিলের সৃষ্টি হয়। চলনবিল
সৃষ্টির সময় এর আয়তন ছিল প্রায় ১ হাজার ৮৮ কিলোমিটার যা এখন অনেকটাই কমে
এসেছে। বর্তমানে চলন বিলের আয়তন অনেকটা হ্রাস পেয়ে ১১৫০ বর্গ কিলোমিটার এ
অবস্থান করছে। আমরা বলতে পারি চলনবিল অনেকগুলো ছোট ছোট বিলের সমষ্টি।
জলপ্রবাহের সময় বিলগুলো একসাথে মিশে বিশাল একটি বিল সৃষ্টি করে। নাটোর জেলার
সিংড়া উপজেলায় রয়েছে চলনবিলের একটি বড় অংশ। বেড়ানোর জন্য চলনবিলে রয়েছে
নৌকা ভাড়া। সারাদিন ঘোরার জন্য একটি নৌকা ভাড়া নিতে পারবেন ৫০০ থেকে ৬০০
টাকার মধ্যে। আরও রয়েছে ইঞ্জিন নৌকা যা পাওয়া যাবে ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকার
মধ্যে।এছাড়াও চলনবিল থেকে দেখা যায় চলনবিল জাদুঘর।
লেখকের মন্তব্য
আজকে আমার লেখা আর্টিকেলটি ছিল নাটোর জেলার বিখ্যাত স্থান এবং ইতিহাস সম্পর্ক। আর্টিকেল কি পড়ার মাধ্যমে আমরা জানতে পারলাম নাটোর জেলার পূর্বের নাম, নাটোর কি জন্য বিখ্যাত, এর ইতিহাস কি সেই সম্পর্কে।এছাড়া আমরা আরও জানতে পারলাম নাটোর জেলার অজানা অনেক তথ্য।আমার লেখা আজকের আর্টিকেলটি “নাটোর জেলার বিখ্যাত স্থান এবং ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তারিত ” আপনাদের যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন এবং এরকম আরো আর্টিকেল পড়ার জন্য আমার ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করবেন। “ধন্যবাদ”।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url